আমি মা!

আমার দুটি মেয়ে।দুটোই আমার কলিজা।ওদের দুজনকেই আমি খুব ভালোবাসি।এক মূহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল হলে, কি জানি ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে।

এবার আসি আসল কথায়,
বড়টার বয়স ৭+ আর ছোটটা সবে ৫ মাস ২ দিন😊
আমার ভুলো রোগ আছে।সব কিছু মনে রাখতে পারিনা।তাই সংগত কারনেই বড় মেয়ের সময়ের প্রেগন্যান্সির জার্নিটা পুরোপুরি মনে নাই।😔😔😔 
তাই আজ লিখব ছোটটার হবার জার্নি নিয়ে।

বড়টার বয়স যখন ৪+ তখন একটা মিসক্যারেজ হয় আমার।তারপর থেকেই দ্বিতীয় বেবির জন্য ট্রাই করছিলাম আমরা।কিন্তুু সুসংবাদ টা আসতে বেশ সময় লেগেছিল। 
গত রোজার মাস,মানে ২০২১ এর সম্ভবত  ৮/১০ রোজাতে জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। খবরটা আমার মাতৃত্ব কে নতুন করে নাড়া দিয়েছিল।প্রথম বার মানুষ যেমন উতসুক থাকে,আমিও তেমনই ছিলাম।আমার মনেই হত না এটা আমার ২য় প্রেগ্ন্যাসি।

সারা দিন ওর সাথে কথা বলতাম,ওকে অনুভব করার চেষ্টা করতাম। আর ইউটিউব এ, বেবি কত সপ্তাহে কতটুকু বড় হয়,সেসব  ভিডিও দেখে বোঝার চেষ্টা করতাম, আমার সোনাটা কতটা বড় হলো।

সব কিছু আমাকে শিহরিত করত।আমি আর আমার বড় মেয়ে , সবটা খুব এনজয় করতাম।

জান্নাত (ছোট মেয়ে৷ আমার) যখন পেটের মধ্যে খেলাধুলা করত,আমি হাত দিয়েই রাখতাম।বিভিন্নভাবে ওকে ছোয়ার বাহানা খুঁজতাম। 

একটা মজার কথা বলব?
বাবু যখন পেটে আসল,আমি ভাবতাম, পেটের চামড়া তো বেশ পাতলা,আর আস্তে আস্তে যখন পেট বড় হবে তখন চামড়া আরো পাতলা হয়ে যাবে।তখন আমি বাবুর হাত, পা,মাথা এগুলো ধরতে পারব।🤣🤣🤣🤣
ও যখন কিক করবে,আমি খপ করে ওর পা টা ধরে দুষ্টুমি করব😉
কিন্তু তা কি সম্ভব!!!  হা হা হা

 আমার বাচ্চা হবার সময় বমি বা মাথা ঘুরানোর সমস্যা হয়না।কিন্তু প্রথম তিন মাস কিছুই খেতে পারিনা।
 জান্নাতের বেলায় সমস্যাটা তিন মাসের জায়গায় ৮ মাস থাকল।ফলে শরীর খুব দুর্বল লাগত।তাছাড়াও উঠতে বসতে খুব সমস্যা হত প্রথম থেকেই।কিন্তু প্রেগন্যান্সির এই সমস্যাগুলো অন্যদের বোঝানোটা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে ওঠে।

মাঝেমধ্যেই অকারণে  ভয় হতো,এবাার বুঝি আর বাঁচব না।
আমি না থাকলে আমার জাফনার(বড় মেয়ে) কি হবে!
আমার বড় মেয়েটা বড্ড৷ ভালো মানুষ।সে তো আমাকে ছাড়া কিছু বোঝেই না,তাহলে আমি না থাকলে ওকে কে খেয়াল করে নিয়ে বেড়াবে।কে ওর সমস্যাগুলোতে ওকে আগলে রাখবে!
এমন হাজারো প্রশ্নে বুক ভার হয়ে উঠতো।
ভাবতাম,আমি না থাকলে আমার এই ঘর এই বিছানা,আমার প্রিয় মানুষটা সব টা অন্য কারো হয়ে যাবে।
কাঁদতাম  খুব তখন।আবার চিন্তা করতাম,আমি কাঁদলে  পেটের বাবুটার কষ্ট হবে।তাই আবার মন ভালে করার ট্রাই করতাম একা একাই। 
বাচ্চা হতে একটা মেয়ের যা কষ্ট, তা কেবল যার হয় সেই জানে।খাইতে কষ্ট, বসতে কষ্ট,শুইতে গেলে পিঠ লেগে যেত।পুরো জার্নি তে আরাম করে একটা দিনও ঘুমাতে পারিনি।কি খেতে যে ইচ্ছে করত, তা নিজেই বুঝতে পারতাম না।
তার ওপর আরেকটা যদি বাচ্চা থাকে,তাহলে তো আর কথায় নাই।!!!
যাই হোক এত কষ্ট করে অবশেষে  ১৬ ডিসেম্বর ডাক্তারের কাছে চেকআপ গিয়ে জানতে পারি তিনও আগামি কাল,অর্থাৎ ১৭ই ডিসেম্বর আসছেন।মানে আমার সিজার ১৭ তারিখে।


সিজার!!!
সে এক অন্যরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। 
পরের পর্বে সো নিয়ে লিখব ক্ষন।
আজ এতটুকুই😊


No comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.